বাঙালির ভাগ্য পরিক্রমা চিরদিন ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘুরেছে



ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটি সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, বাঙালির ভাগ্য পরিক্রমা চিরদিন ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘুরেছে। ভাগ্য বিপর্যয় বারবার দাসত্বের আকারে তাদের ললাটলিখন হয়ে আবির্ভূত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর ময়দানে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। যদিও এ পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর আলি খাঁ ও তার অনুচরদের বিশ্বাসঘাতকতা। এ যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রায় দু শ’বছরের জন্য অস্তমিত হয়ে যায়। এর পরের ইতিহাস ইংরেজ শাসকদের অত্যাচার, অনাচার, নির্যাতন আর বঞ্চনার নির্মম ইতিহাস। কিন্তু বাঙালি জনগণ কখনোই ওই ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণকে মেনে নেয়নি। এর বড় আকারে প্রকাশ ঘটে ১৮৫৭ সালে। এ সময় জনতার অসন্তোষ সিপাহী বিদ্রোহের আকারে রূপ নেয়, যদিও তা চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। পরবর্তীতে বাংলার বীর সন্তান তিতুমীর, টিপু সুলতান ও হাজী শরীয়তুল্লাহ প্রমুখের প্রতিরোধ সংগ্রাম, চট্টগ্রামের বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন প্রমুখের সশস্ত্র প্রতিবাদ।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার জন্য গঠিত হয় ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ। এ দুটি দলের মাধ্যমে চলে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা এবং অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ দু ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান নামে দুটো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিম এর দুটো অংশ নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় দেড় হাজার মাইলের মতো। স্বাধীন হয়েও পূর্ব পাকিস্তান ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তানের কলোনি হয়ে ওঠে, এখানকার বাঙালিরা আগের মতোই রয়ে গেল বঞ্চিত। পরিবর্তন হলো না তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার।
পাকিস্তান শাসনামল (১৯৪৭-১৯৭১):
পাকিস্তান মূলত এমন একটি দেশ ছিলো যার দু খণ্ডের মানুষে-মানুষে শুধুমাত্র ধর্ম ছাড়া আর কোনই মিল ছিল না। হাজার মাইলের দূরত্ব ছাড়াও সংস্কৃতি, ভাষা, আচার-আচরণ এমনকি অর্থনৈতিক অবস্থানেও ছিল ব্যাপক ব্যবধান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি অনুসন্ধান করে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণমূলক আচরণ। কেবল অর্থনৈতিক শোষণ নয়, বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপরও নিপীড়ন শুরু হয় এবং এর প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় যখন পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ঘোষণা দেন “উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ জিন্নাহর এ ঘোষণা জনগণ মেনে নেয়নি। যার ফলশ্র“তিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫১ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়ে আহমদ, রফিক ও জব্বাররা প্রমাণ করে যায় যে, পৃথিবীতে একমাত্র জাতি হিসেবে আমরা বাঙ্গালিরাই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি।
ওই সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী:
১৯৫৪: নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিপক্ষে যুক্তফ্রন্টের জয়। ঐ বছরের ৩ এপ্রিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হক চার সদস্য বিশিষ্ট যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন। কিন্তু ৩১ মে পাকিস্তানের গভনর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করে দিয়ে শাসনতন্ত্রের ৯২ (ক) ধারা জারির মাধ্যমে প্রদেশে গভর্নরের শাসন প্রবর্তন করেন।
১৯৫৬: ২৩ মার্চ ১৯৫৬ পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র কবে কার্যকর হয় এবং এ বছর পাকিস্তানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৫৮: আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সামরিক শাসন জারি।
১৯৬২: ছাত্রদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন শুরু।
১৯৬৬: আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান ছয় দফা দাবি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৬৮: শেখ মুজিবর রহমান, কিছু বাঙালি সাধারণ মানুষ এবং সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র কমিটি তাদের ১১ দফা আন্দোলন শুরু করে।
১৯৬৯: আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থান চরম রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ, নবকুমার স্কুলের ছাত্র মতিউর রহমান এবং গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জোহা
১৯৭০: জেনারেল আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরে যান। চরম চাপের মুখে ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পায়, যা সমগ্র পাকিস্তানের সর্বমোট ৩০০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তৎকালীন সামরিক সরকার ফলাফল মেনে নিলেও বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে।
উত্তাল মার্চ (১৯৭১):
নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করলেও ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩ মার্চ ১৯৭১, ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বোনা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কোনো কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে যায় এই সিদ্ধান্তে। সারাদেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাদেশে পাঁচ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। শুধুমাত্র তাঁর মুখের কথায় পুরো পূর্ব পাকিস্তান অচল হয়ে যায়। সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, কিন্তু বাঙ্গালি জনগণ রাজপথেই অবস্থান করে। পাঁচ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। ঘোষণা করেন- “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
সারাদেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল তখন সামরিক বাহিনীতে চলতে থাকে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার পূর্বপ্রস্তুতি। বেলুচিস্তানের কসাই হিসেবে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়, কিন্তু কোন বাঙ্গালি বিচারপতি তাকে শপথ পাঠ করাতে রাজি হয়নি। এদিকে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার করতে থাকে, অপরদিকে চলতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র প্রেরণ।
অপারেশন সার্চলাইট:
1971-25-march ২৫ মার্চ রাতে জেনারেল ইয়াহিয়া পাকিস্তানি বাহিনীকে বাঙ্গালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করে। সে রাতেই পাকিস্তান বাহিনী শুরু করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের হত্যাযজ্ঞ, যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালিদের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হিসেবে সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, নির্বিচারে শহীদ করা হয় সারা বাংলাদেশের অসহায় ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষদের।
হত্যাকাণ্ডের সংবাদ যাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে না পৌঁছায় সে লক্ষ্যে ২৫ মার্চের আগেই ঢাকা থেকে সব বিদেশি সাংবাদিককে বের করে দেয়া হয়। এ রকম একটি অবস্থায়ও সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করে ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে এই গণহত্যার খবর জানিয়েছিলেন। যদিও এই হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা, কিন্তু বাঙালি হত্যা পুরো দেশজুড়ে চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে তারা চালায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল জগন্নাথ হল পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়। এতে ছয় শ’থেকে সাত শ’আবাসিক ছাত্র নিহত হয়। যদিও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে, কিন্তু হামিদুর রহমান কমিশনের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে।
স্বাধীনতার ঘোষণা:
টেক্সাসে বসাবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নথি সংগ্রহক মাহবুবুর রহমান জালাল বলেন, “বিভিন্ন সূত্র ও দলিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রমাণ হয় যে, ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছিল তার বা অন্য কারো হয়ে ঘোষণা দেয়ার অনেক পূর্বে। ২৫ মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙে গেলে ইয়াহিয়া গোপণে ইসলামাবাদে ফিরে যান। এবং গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানি সেনারা সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুসহ তার পাঁচ বিশ্বস্ত সহকারীকে গ্রেফতার করে।  গ্রেফাতারের পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে যান। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:
“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর
বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।”
বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোষণাপত্র:
২৫-শে মার্চ থেকে ঢাকার হোটেল ইন্টারকোন্টিনেন্টালে অবস্থানরত সকল সাংবাদিককে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রাখে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র  থেকে ঘোষণা হয় যে “শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে সাড়ে সাত কোটি জনগণকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা দেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন”। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতার মূল ঘোষক কে ছিলেন তা নিয়ে ব্যপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে একটি ইতিহাস পুস্তক প্রকাশিত হয় যাতে ৩টি বিষয় উপস্থাপিত হয়।
# শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণাপত্র লিখেন ২৫-এ মার্চ মাঝ রাত কিংবা ২৬–শে মার্চ প্রথম প্রহরে।
# শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি ২৬ তারিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। কিন্তু সীমিতসংখ্যক মানুষ সেই সম্প্রচারটি শুনেছিল।
# পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের হয়ে ২৭-শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপ:
“On behalf of our great national leader, supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman do hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibor Rahman is sole leader of elected representatives of 75 million people of Bangladesh. I therefore appeal on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all democratic countries of the world specially big world part and neighboring countries to take effective steps to stop immediately. The awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The legally elected representatives of the majority of the people as repressionist, it is cruel joke and contradiction in terms which should be fool none. The guiding principle of a new step will be first neutrality, second peace and third friendship to all and anonymity to none. ─ May Allah help us, Joy Bangla.”
অনুবাদ:
“আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। এটি আরও ঘোষণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সেই কারণে আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশেষ করে বৃহৎ বিশ্ব ও প্রতিবেশীদের কাছে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হামলার ফলে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ জনগণের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিপীড়নকারী, এটি একটি ক্রূর কৌতুক ও মিথ্যা অপবাদ যার কাউকে বোকা বানানো উচিৎ নয়। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রথম হতে হবে নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয় শান্তি এং তৃতীয় সকলের সাথে বন্ধুভাবপন্ন ও কারো সম্বন্ধে অজ্ঞানতা নয়। ─আল্লাহ্ সহায় হোক, জয় বাংলা। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
অস্থায়ী সরকার গঠন:
1971-25-march১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা মেহেরপুর) বৈদ্যনাথতলার অন্তর্গত ভবেরপাড়া (বর্তমান মুজিবনগর) গ্রামে। শেখ মুজিবুর রহমান এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব দেয়া হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামকে, আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দীন আহমদ এর ওপর। বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন গণপরিষদের সদস্য এম ইউসুফ আলী। এ ঘোষণাপত্র প্রবাসী সরকারের অবস্থান ও যৌক্তিকতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে। এদিনই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়া হয় এবং একই সঙ্গে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও বৈধ বলে স্বীকৃত হয়। এ ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলের মধ্যে চেইন অফ কমান্ড স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।
সময়ের পরিক্রমায় যুদ্ধের রূপ/ক্ষেত্র-মার্চ থেকে জুন:
ঢাকায় গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানি বাহিনী ১০ এপ্রিলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিজেদের আয়ত্তে আনার পরিকল্পনা করে। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এবং ছাত্র ও সাধারণ জনতা তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। চট্টগ্রামে বাঙ্গালি সেনাবাহিনীর সদস্য ও ইপিআর এর সদস্যরা বিদ্রোহ করে শহরের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে পাকিস্তানি বাহিনীকে যুদ্ধজাহাজ থেকে গোলাবর্ষণ করতে হয় এবং বিমান আক্রমণ চালাতে হয়। কুষ্টিয়া, পাবনা, বগুড়া ও দিনাজপুর ইত্যাদি জেলাতেও বাঙ্গালি সেনারা বিদ্রোহ করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানিরা বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রের বলে মে মাসের শেষ নাগাদ এসব মুক্তাঞ্চল দখল করে নেয়। মার্চের শেষ দিক হতেই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া শরণার্থীদের এই স্রোত নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং এ সময়ে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর
imagesমুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধগুলো ছিল অনেকটাই পরিকল্পনাহীন। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হবার পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই পরিকল্পিত রূপ পেতে শুরু করে। ১১ জুলাই বাংলাদেশের সামরিক কমান্ড তৈরি করা হয়। কর্ণেল এম.এ.জি ওসমানীকে কমান্ডার ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আবদুর রবকে চিফ অফ আর্মি স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকারকে ডেপুটি চিফ অফ আর্মি স্টাফ ও চিফ অফ এয়ার ফোর্সের দায়িত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশকে সর্বমোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি সেক্টরের জন্যে একজন করে কমান্ডার নির্বাচন করা হয়। ১০নং সেক্টরটি ছিল কমান্ডার ইন চিফের (সি-ইন-সি) সরাসরি তত্ত্বাবধানে, যার মধ্যে নৌ-বাহিনী ও সি-ইন-সির বিশেষ বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে উপযুক্ত কোন কর্মকর্তা ছিল না বলে ১১নং সেক্টরের (নৌ সেক্টর) কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না; এ সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যখন যে সেক্টরে অপারেশন চালাতেন, তখন সে সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের অধীনে থাকতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল সীমান্ত এলাকায় এবং ভারতের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ লাভ করত। সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করার জন্যে তিনটি ব্রিগেড (১১ ব্যাটালিয়ন) তৈরি করা হয়। এছাড়াও প্রায় এক লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের ভেতরে নিয়মিত বিভিন্ন অপারেশনে পাঠানো হত।
আগস্টের পরপরই বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর হামলা চালাতে থাকে। পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে সামরিক স্থাপনা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি মুক্তিযোদ্ধদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। গেরিলা হামলায় পাকিস্তানের চৌকশ সামরিক বাহিনীকে নাজেহাল করে তোলে স্বল্প দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালি গেরিলা যোদ্ধারা। এমনকি রাজধানী ঢাকায় ক্রাক প্লাটুন দুঃসাহসী সব অভিযান চালায়। ১৬ আগস্ট ১৯৭১ নৌ-কমান্ডোরা অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করে থাকা পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল শত্র“মুক্ত হতে শুরু করে।
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর
মুক্তিবাহিনী তীব্র আক্রমণের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী সীমান্ত পোস্টগুলো একে একে দখল করে নিতে শুরু করে। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনী কমলপুর, বিলোনিয়া, বয়রা প্রভৃতি সীমান্ত পোস্টে হামলা করে এবং ৩০৭টি পোস্টের ৯০টিই দখল করে নেয়। পাশাপাশি গেরিলা বাহিনীর হামলাও তীব্রতর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর নিয়মিত কাজ ছিল সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করা এবং দেশপ্রেমিক বাঙ্গালিদের নির্যাতন করা। সীমান্তে ও দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের জবাবে তারা এ অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে তারা দিনের বেলাতেও নিজেদের সামরিক ঘাঁটি থেকে বের হতে ভয় পেত। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জরুরি ভিত্তিতে পাঁচ ব্যাটালিয়ন সৈন্য তলব করা হয়।
৪ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আহুত নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি সম্বলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হবার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব-স্ব সীমান্তের ভেতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সোভিয়েট ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) প্রতিনিধি এই প্রস্তাবকে ‘একতরফা’ বলে অভিহিত করে ভেটো (ভোটো মানে- আমি মানি না) প্রয়োগ করেন। পোল্যান্ডও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ভোট দানে বিরত থাকে।
imagesপাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থা দেখতে দেখতে এত খারাপ হয়ে যায় যে, কোন সমাধান খুঁজে না পেয়ে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতে আক্রমণ করে বসে। তখন পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল হঠাৎ আক্রমণ করে ভারতের বিমান বাহিনীকে পুরোপুরি পঙ্গু করে দেয়া। কিন্তু তারা সেটি করতে সক্ষম হয়নি। ভারত সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে তার সেনাবাহিনী নিয়ে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের ভেতর তখন পাকিস্তানের পাঁচটি পদাতিক ডিভিশন। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হবার পর সেটি চলে মাত্র ১৩ দিন। যুদ্ধ শুরু হবার পর পাকিস্তানের একটি একটি করে ঘাঁটির পতন হতে থাকে। যৌথবাহিনী তাদেরকে পাশ কাটিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততর গতিতে ঢাকার কাছাকাছি এসে হাজির হয়ে যায়। তারা ঢাকা ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় রেডকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ: ১৯৭২-বর্তমান
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসেন। এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৭৫ সালের শুরুতে অরাজক অবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশে বাকশালের অধীনে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু অরাজক অবস্থা দিন দিন বাড়তে, একই সঙ্গে বাড়তে থাকে চাপা ক্ষোভ। দেশের এরকম একটি দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ক্ষমতার মঞ্চে আসে সাময়িক পরিবর্তন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
কিন্তু শাসন ক্ষমতা নিয়ে গোপনে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। পরবর্তী তিন মাসে (১৯৭৫) একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান চলতে থাকে, যার সমাপ্তিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি ক্ষমতার আসার পর থেকে দেশে ধীরে ধীরে স্থিতাবস্থা বিরাজ করতে শুরু করে। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে (এক অভ্যুত্থানে) নিহত হন। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এরশাদ স্বৈরশাসক হিসেবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়, বাংলাদেশ ফিরে আসে গণতন্ত্রের পথে। সেই থেকে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
পরিশেষে, স্বাধীনতার পর থেকে নব্বই এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অনেকটাই হতাশাপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। বাংলাদেশ আজ মাথায় অনেক সাফল্যের মুকুট পরে ওঠে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিভাজন ভুুলে গিয়ে এবং দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিতে পারলে এ সাফল্য আরও দৃশ্যমান হবে, দেশে আসবে অথনৈতিক মুক্তি। আমরা পাব সত্যিকারের এক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।